পৃথিবীর একপ্রান্তে যখন দিনের আলো উদিত হয় তখন অন্য
প্রান্তে অন্ধকার নেমে আসে। প্রকৃতির এই নিয়ম এর বাইরে আমরা কেন যেতে পারি না?
প্রযুক্তি কি সেই একই পথে হাটে ? এখন তাই দেখতে পাচ্ছি। যখন পৃথিবীর এক প্রান্তে
নিউক্লিয়ার পাওয়ার জেনারেশন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে সেখানে আমাদের মত দেশ বিলিয়ন ডলার
ব্যায় করে এই রকম উচ্চভিলাসী প্রযুক্তি ব্যাবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদনের দিকে ধাবিত
হচ্ছে।
লুবমিন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট |
জার্মানি ২০২২ সালের
মধ্যে সব পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেবে আর ঠিক সেই সময় আমাদের দেশের
বিদ্যুৎ কেন্দ্র চালু হবে। জার্মানি কেন তার পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করতে
চাইছে? অনেকে ভাববেন ভয় আর আশংকা থেকে হয়ত? না শুধু ভয় নয়, এর মধ্য রয়েছে রাজনৈতিক,
বাণিজ্যিক আর প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতা। এই সময়ে জার্মানির ৮টি পারমাণবিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্র সম্পুর্ন্য বন্ধ হয়ে গেছে আর ১৬ টি বন্ধের পথে।
বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে লেখক |
জার্মানির এই সাইট গুলোকে
বন্ধ করতে প্রয়োজন প্রায় ৩৬ বিলিয়ন ডলার বা তার অধিক আর একটি পারমাণবিক ওয়াষ্ট
ডিস্পোজাল সাইট নির্মান করতে লাগবে আরো ২ বিলিয়ন ডলার সময় লাগবে প্রায় ১৫ বছর।
জার্মানির সব পারমানবিক কেন্দ্রগুলোকে সরাতে সময় লাগবে ৪৮ বছর অর্থাৎ আগামী ২০৭০
সালে জার্মানি পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অস্তিত্ব বিলীন হবে।
এই বিশাল
ব্যায় সরকার নিজদের কাঁধে নিতে চাইছে না
তারা এর ভার তুলে দিতে চান বিদ্যুৎ কেন্দ্র পরিচালনা কোম্পানির হাতে যাদের কে ১০
থেকে ১৮ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে কিন্তু কোম্পানির মূলধন ও এই পরিমাণ হবে
না তাই তারা নিজেদের কে দেউলিয়া ঘোষণা করা ছাড়া আর কিছু থকেবে না। তাহলে এই বিশাল
ব্যায় কে বহন করবে? ইতিমধ্যে কোম্পানিগুলো আদালতে দ্বারস্থ হতে শুরু করেছে। ফলফল
যাই হোক আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে শেষমেশ জার্মান নাগরিকদের কেই এই এর ব্যায় বহন
করতে হবে।
পারমানিবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিতরের একটি দৃশ্য । |
আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে ৮০% নবায়নযোগ্য জ্বালানী থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন
করতে চায় জার্মান সরকার। জার্মান সৌর
শক্তি এবং বায়ু বিদ্যুৎ এই দুটি উৎস থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চায়। জার্মানির কোম্পানি
গুলো কাতারি ব্যাবসায়িদের রাজী করিয়েছে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে।
এই প্রকল্পে যে বিদ্যুৎ উৎপাদিত হবে তার প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদন খরচ কয়লা বা
গ্যাস থেকে উৎপাদিত খরচ থেকে অনেক কম হবে।অপরদিকে জার্মানির নাগরিকদের চাপে এবং
রাজনৈতিক দল গুলোর প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে রাজনীতিবিদ রা পারমাণবিক চুল্লি বন্ধের
পক্ষে মত দিয়েছেন।
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভিতরের দৃশ্য। |
আমাদের দেশ যে
পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করা হবে তা হবে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক আর
নিরাপত্তাগত ভাবে ঝুকিপুর্ন্য। ভবিষ্যতে
এইদেশের নাগরিকদের চাপে এই কেন্দ্র কে বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে তখন এই
বিশাল ব্যায়ে স্থাপিত কেন্দ্রটিকে সরাতে আবার বড় ধরনের বিনিয়োগ করতে হবে। সেই
ব্যায় মেটাতে হবে তখনকার নাগরিকদেরকে। অপরদিকে যে দ্রুতগতিতে সোলার প্যানেল
প্রযুক্তি উন্নত হচ্ছে তাতে সোলার থেকে উৎপাদিত বিদুতের দাম পারমাণবিক চুল্লি থেকে
উৎপাদিত বিদুতের চেয়ে কম হলে তখন এই দামে বিদ্যুৎ কে কিনেব? তখন এই পারমাণবিক
কেন্দ্রগুলকে সরকারের ভুর্তকি দিতে হবে? আর সবচেয়ে বড় যে সমস্যা হবে সেটি হচ্ছে এই
কেন্দ্রের আয়ু ফুরিয়ে গেলে তখন এটিকে সরিয়ে ফেলতে আরোও হাজার হাজার কোটি টাকা খরচ
করতে হবে। সেই টাকা তখন জনগণের পকেট থেকে যাবে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ সস্তা বললেও সস্তা নয় উৎপাদন সময়কালে সস্তা কিন্তু স্থাপন আর অপসারণ ব্যয় অনেক বেশি। সবচেয়ে
বেশি সমস্যা হচ্ছে এই পারমাণবিক বর্জ্য অপসারণ ও সংরক্ষণ।
আমি গতকাল জার্মানির একটি পুরাতন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
দেখতে গিয়েছিলাম। সেটি সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন তৈরি ও পরিচালনা করেছিল। এখানে যে
প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হয়েছিল বাংলাদেশেও সেই প্রযুক্তি ব্যাবহার করা হবে কিন্ত
এটার চেয়ে আপগ্রেডেট। এই কেন্দ্রটি জার্মানির সরকার ১৯৯০ সালে বন্ধ করে দেয়, তখন
থেকে এটির অপসারণ শুরু হয় এবং এটিকে সম্পুর্ন্যভাবে অপসারণ করতে আর ১৫ বছর লাগবে।
সেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রে গিয়ে রূপপুর পারমাণবিক কেন্দ্রের ভবিষ্যত দেখতে পেলাম।